পরকীয়া – তুমিতো বেজায় দুষ্টু! (অণুগল্প )

পরকীয়াইদানিং সাইফুলের ব্যাবহার খুব একটা ভালোনা। অফিস টাইমের ফাঁকে ফোন দিলে এত্তগুলা অযাচিত অশোভন কথা শুনিয়ে দেয়।
অথচ সেই ছোট্ট বেলা থেকেই সাংসারিক জীবন নিয়ে আমার বহুধারার স্বপ্ন ছিলো। বিয়ের পর এভাবে থাকবো, ওভাবে থাকবো। এই করবো সেই করবো আরও কতকি। কিন্তু ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই।
ইসলামিক ঘরনার পরিবারে বড় হওয়ায়, প্রেম ভালবাসার ছিটে ফোঁটাও চোখে দেখিনি। রিক্সার হুড তুলে একসাথে ঘুরাঘুরি, নির্দিষ্ট দিনে কারো হাত ধরে হাঁটা, এসব কিছুতো কল্পনার বাহিরেই ছিলো। তার মধ্যেই আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে। আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলামনা।
সেটারও একটা কারণ আছে। আমি যখন থেকে হালকা পাতলা বুঝি, সে সময় থেকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে কোন আলেম বা প্র্যাক্টিসিং মুসলিমকে ভাবতাম। কিন্তু সাইফুল এ দুটির একটিও না। তবে উনার বেশ টাকা পয়সা আছে। সুন্দরও কম নয়। ঢাবি থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে। এলাকায় নাকি উনার খুব নামডাক।
বাবা-মা’র অতি আগ্রহ দেখে অপছন্দের বিষয়টিও তাদেরকে খুলে বলা সম্ভব হলোনা। সবশেষে বিয়েটাও হয়।
বিয়ের পর কিছুদিন পর্যন্ত ভালই চলছিলো সংসার। অফিস থেকে ফেরার পর ওনাকে কি সারপ্রাইজ করা যায়, সেই চিন্তাতেই মরিয়া হয়ে থাকতাম।
আজ ড্রইং রুমে বসে ডেস্কটপে একটা কাজ করছিলাম। এমন সময় কলিং বেলের শব্দ কানে আসলো। টেবিল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ঘন্টার কাটা সাড়ে ১২ টার কাছাকাছি। দরজা খুলতেই দেখি সাইফুল। মাথায় ভালোভাবে কাপড় টেনে অনুচ্চস্বরে সালাম দিলাম। সাইফুল বিরক্তিকর হাসি দিয়ে জবাব করলো।
প্রতিদিনের রুটিন মাফিক, সাইফুল ৩টায় আসার কথা। তাছাড়া আজ রবিবার। আফিস টাইম হাফ হওয়ারও কথা নয়। তাহলে এ টাইমে বাসায় কেন(?) নিমিষেই নানান প্রশ্ন আমার মনটাকে ঝালাপালা করে দিলো।
দরজা লক করে পায়ে চেপে রুমে চলে আসলাম । সাইফুল ততক্ষণে জামাকাপড় খুলে ওয়াস রুমে চলে গেছে। ওনার ফোনটা বিছানায় রাখা। লাগাতার মেসেজ আসায় ভাইব্রেশন কম্পনে বিছানাটাও যেন খানিক কাপতে লাগলো। আমি সাধারণত ওনার ফোনে ধরিনা।
আজ কেন জানি উল্টোটা করে ফেললাম। হাতে ফোন নিয়ে দেখি একই নাম্বার থেকে অনেক গুলো মেসেজ। লিখেছে,
“অফিস থেকে বের হইছো?” আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন?” ওহ্ তোমার নীল শার্টটা পরে আসবা কিন্তু!”
আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়লো। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পায়ের জোর হারিয়ে ফেলেছি।
ওয়াশ রুম থেকে সাইফুল জোরেশোরে বললো,
– তাশফী! গামছাটা নিয়ে আসো তো।
আমি ওনার ডাকে সম্মতি ফিরে পাই। তড়িঘড়ি করে ফোনটা বিছানায় রাখি। পরে গামছাটা দিয়ে আসি।

পরিপাটি হয়ে সাইফুল যখন বাসা থেকে বের হয়, আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম,
– স্যার! কোথায় যাচ্ছেন?
একটা কথা বলে রাখি। সাইফুলকে সম্মান করে সবসময় আমি স্যার বলেই ডেকে থাকি। প্রথম দিকে, উনিও খুব খুশি হতো। প্রত্যুত্তরে আমাকেও ওনি ম্যাডাম বলতো। সময়ের সাথে সাথে এসব স্যার সম্মোধনের প্রয়োজনীয়তা যেন ফুরিয়ে গেছে।
বাইকে স্টার্ট দিতে দিতে সাইফুল বললেন,
– অফিসের একটা জরুরি মিটিং আছে।
– ওহ্, সাবধানে যাবেন।
মনে মনে বললাম, কিসের জরুরী মিটিং তা তো মেসেজেই দেখেছি।
মিথ্যে কথা নাকি শুনতে মিষ্টি হয় কিন্তু সত্যি, সাইফুলের এই মিথ্যে কথাটা আমার কাছে খুব বিষাদ লেগেছে। কোন উপায় না পেয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে একা-একা খুব কান্না করলাম। জীবনের বড় পাপ গুলিকে যত্ন করে খুঁজতে লাগলাম। কোন পাপের শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছে।

রাত তখন দেড়টা। জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদ যেন তার জোছনা গুলো আমার উপর ফিকে মারছে। অতীতে জোছনার প্রত্যেকটা রাত আমার জন্য আনন্দের ছিলো। চাঁদটা তখন সুন্দর লাগতো। আজ তার উপর ঘৃণা জন্মেছে। তার জোছনা গুলোর উপর আরো বেশি। বা দিকে তাকিয়ে দেখি বিছানার ওপাশে সাইফুল বেদমদার ঘুমাচ্ছে। বুকের উপর ফোনটা রাখা। হাতে নিয়ে দেখি ঐ আগের নাম্বার থেকেই কত গুলো ম্যাসেজ। একটা ম্যাসেজে লিখা ছিলো,

” তুমিতো বেজায় দুষ্টু! “

আরও পড়তে পারেনপাপের সাজা

নোটঃ পরকীয়া অণুগল্প টি আমার বাংলা পোস্ট দ্বারা সম্পাদিত কিছু সংযোজিত। ভুলক্রটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, পরকীয়া অণুগল্প টি পড়ে ভালো লাগলে এটি আপনার বন্ধুদেরকে পড়াতে শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। আপনাদের উৎসাহ ও সমর্থন লেখক লেখিকাদের আরও সুন্দর ও ভালো লেখনিতে উদ্দীপনা যোগায়। –রুবেল (আমার বাংলা পোস্ট)

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment