স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে অথবা পবিত্রা থাকলে এবং ঐ পবিত্রতায় কোন সঙ্গম না করে থাকলে এক তালাক দেবে। (বুঃমুঃ)
আর এর ব্যাপারে দুই ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখবে।(কুঃ৬৫/২, সআদাঃ ১৯১৫)
অতঃপর স্বামী স্ত্রীকে ঘর থেকে যেতে বলবে না এবং স্ত্রীও স্বামী – গৃহ ত্যাগ করবে না। বরং গর্ভকাল বা তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এই ইদ্দতের মাঝে স্ত্রী ভরণ – পোষণও পাবে। মহান আল্লাহ বলেন,হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর তখন ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও ইদ্দতের হিসাব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। তোমরা ওদেরকে স্বগৃহে হতে বের করো না এবং ওরাও যেন সে ঘর হতে বের না হয়; যদি না ওরা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এ হল আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর বিধান লঙ্গন করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এরপর কোন উপায় বের করে দেবেন। ( বুঃ ৬৫/১)
অতঃপর ভুল বুঝে স্বামীর মন ও মতের পরিবর্তন ঘটলে যদি স্ত্রী ত্যাগ করতে না চায় , তাহলে ইদ্দতের ভিতরেই ( তিন মাসিকের পূর্বে পূর্বেই ) তাকে ফিরিয়ে নিতে পারে। তবে ফিরিয়ে নেবার সময়ও দুই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখবে।
উল্লেখ্য যে, স্ত্রী প্রত্যানীতা করার সময় তার সন্মতি জরুরী নয়।( মবঃ ৯/৬৬)
কিন্তু মন বা মতের পরিবর্তন না হলে ও স্ত্রীকে তার জীবন থেকে আরও দূর করতে চাইলে চাইলে দ্বিতীয় পবিত্রতায় দ্বিতীয় তালাক দেবে এবং অনুরূপ সাক্ষী রাখবে। এরপরও স্ত্রী স্বামী গৃহ ত্যাগ করবে না এবং স্বামী ও তাকে বের করতে পারবে না। পরন্ত তাকে উত্যক্ত করে সংকটে ফেলাও বৈধ নয়। (কুঃ ৬৫/৬)
এক্ষেত্রে স্ত্রীর উচিত , নানা অঙ্গ সজ্জা ও বিভিন্ন প্রেম -ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে স্বামীর মনকে নিজের আকর্ষণ
করার চেষ্টা করা। এখনও যদিন মত পরিবর্তন হয় , তাহলে স্বামী তাকে প্রেম ফিরিয়ে নিতে পারবে। নচেৎ
একেবারে চিরতরে বিদায় করতে চাইলে তৃতীয় পবিত্রতায় তৃতীয় তালাক বিবাহ চিরতরে বিচ্ছেদ করবে এবং যথা নিয়মে সাক্ষী রাখবে। এরপর স্ত্রী স্বামী গৃহ ত্যাগ করবে আর তার জন্য কোন ভরণ – পোষণ নেই।( ফিসুঃ ২/১৬৭)
তৃতীয় তালাকের পর স্বামী চাইলেও স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে আনতে অয়ারে না। নতুন মোহর ও বিবাহ আকদেও নয়। হ্যাঁ, তবে যদি ঐ স্ত্রী স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় বিবাহ করে, স্বামী – সঙ্গম করে এবং সে স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দেয় অথবা মারা যায়, তবে ইদ্দতের পর পুনরায় প্রথম স্বামী নব বিবাহ – বন্ধনে ঐ স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারে। এর পূর্বে।(কুঃ ২/২৩০)
এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে যদি কেউ ঐ নারীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে ২/১ রাত্রি সহবাস করে তালাক দেয় , তবুও পূর্বে স্বামীর জন্য সে বৈধ হবে না। কারন, একাজ পরিকল্পিতভাবেই করা হয় এবং স্ত্রীও অনেক ক্ষেত্রে এ কাজে রাজি থাকে না। পরন্ত হাদিস শরীফে এই হালাল কারী দ্বিতীয় স্বামীকে ধার করা ষাড় ও অভিশপ্ত বলা হয়।( ইরঃ৬/৩০৯, ইমাঃ ১৯৩৬ নং,মিঃ ৩২৯৬ নং)
পক্ষান্তরে এক অথবা দুই তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে না নিলে এবং তার বাকী ইদ্দত তালাক না দিয়ে অতিবাহিত হলে স্ত্রী হারাম হয়ে যায় ঠিকই; কিন্তু তারপরেও যদি স্বামী – স্ত্রী পুনরায় সংসার করতে চায়, তবে নতুন মোহর দিয়ে নতুন ভাবে ( আকদ) পড়ালে এই পুনঃবিবাহে উভয়ে একত্রিত হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে ঐ শাস্তি নেই। কিন্তু পূর্বে যে এক অথবা দুই তালাক সে ব্যবহার করেছে, তা ঐ স্ত্রীর পক্ষে সংখ্যায় গণ্য থাকবে।
সুতরাং দুই তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে নিয়ে থাকলে বা ইদ্দত পার হয়ে যাওয়ার পর পুনঃবিবাহ করে থাকলে সে আর একটি মাত্র তালাকের মালিক থাকবে। আর একটিবার তালাক দিলে স্ত্রী এমন হারাম হবে যে, সে দ্বিতীয় বিবাহের স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক না দিলে বা মারা না গেলে পূর্ব স্বামী আর তাকে ( বিবাহের মাধ্যমে ) ফিরে পাবে না। এতএব সারা জীবনে একটি স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী মাত্র ৩ বার তালাকেরই মালিক হয়। ১০ বছর পর পর ৩ বার তালাক দিলেও শেষ বারে পূর্ব অবস্থা ছাড়া আর ফিরিয়ে নিতে বা পুনঃবিবাহ করতে পারে না।(ফিসুঃ২/২৪৭)
অবশ্য দ্বিতীয় স্বামী গ্রহন করার পর তালাক বা মৃত্যুর কারণে ইদ্দতের পর প্রথম তালাকেই মালিক হয়। ( ফিসুঃ ২/২৪৯)
তালাকপ্রাপ্তা নারী যদি বিধিমত তার স্বামীকে পুনঃবিবাহ করতে চায় বা অন্য স্বামী গ্রহন করতে চায় তবে কোন স্বার্থ , রাগ বা বিদ্বেষ বশে তাকে এতে বাধা দেওয়া তার অভিভাবকের জন্য বৈধ নয়।
মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমার যখন স্ত্রী বর্জন কর এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল অতিবাহিত করে তখন তাদেরকেতাদের স্বামী গ্রহন করতে বাধা দিও না; যদি তারা আপোষে খুশীমত রাজী হয়ে যায়। (কুঃ ২/২৩২)
স্ত্রীর মাসিকাবস্থায় তালাক দিলে স্বামী গোনাহগার হবে এবং সে তালাক গণ্য হবে না।
পবিত্রবস্থায় তালাক দিলেই তবে তা গণ্য হবে। স্ত্রীর মাসিকের খবর না জেনে তালাক দিলে গোনাহগার হবে না এবং তালাকও নয়। পক্ষান্তরে জেনে – শুনে দিলেই গোনাহগার হবে।( ফমঃ ৬৩-৬৪ পৃষ্ঠা)
অনুরূপ এক মজলিসে তিন তালাক হারাম। সুতরাং যদি কেউ তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে তোমাকে তালাক, তালাক,তালাক , অথবা তোমাকে তিন তালাক, বলে বা এর অধিক সংখ্যা উল্লেখ করে,তবে তা কেবল এক তালাকেই গণ্য হবে। এইভাবে এক সঙ্গে তিন তালাক দেওয়ার পর ভুল বুঝে পুনরায় যথারীতি ইদ্দতে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে বা ইদ্দতের পর যথা নিয়মে পুনঃবিবাহ করতে বাধা নেই। (মবঃ ৩/১৭১-১৭৩, ২৬/১৩৩, তুআঃ ১৪৮ ও ২২৮ পৃষ্ঠা)
কিন্তু অনুরূপ তিনবার করে থাকলে পূর্বোক্ত নিয়মানুযায়ী চাইলে পুনঃ সংসার করতে পারে। নচেৎ না।
অনিয়মে তালাক দেওয়া আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করার অন্তর্ভুক্ত । ( কুঃ ২/২২৯, ৬৫/ ১)
সুতরাং সময় ও সংখ্যা বুঝে তালাক দেওয়া তালাকদাতার জন্য ফরয।
যদি স্বামী তার স্ত্রীকে বলে যদি তুমি অমুক কাজ কর বা অমুক জায়গায় যাও তাহলে তোমাকে তালাক এবং এই বলাতে যদি সত্য সত্যই তালাকের নিয়ত থাকে তবে এমন লটকিয়ে রাখা তালাক স্ত্রীর ঐ কাজ করার সাথে সাথে গণ্য হয়ে যায়। অবশ্য তালাকের নিয়ত না থেকে যদি স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে কেবল ঐ কাজে কঠোর নিষেধ করাই উদ্দেশ্য থাকে, তাহলেতালাক গণ্য হবে না। তবে স্ত্রীর ঐ কাজ করার পর স্বামীকে কসমের কাফফারা লাগবে। (মবঃ ৫/৯৪)
অনুরূপ তালাকের উপর কসম খেলেও। যেমন যদি কেউ তার ভাইকে বললে, তুই যদি এই করিস, তাহলে আমার স্ত্রী তালাক, বা আমি যদি তোর ঘর যাই,তাহলে আমার স্ত্রী তালাক, তবে এ ক্ষেত্রেও নিয়ত বিচার্য। তলাকের প্রকৃতি নিয়ত হলে তালাক হবে;নচেৎ না। তবে কসমে কাফফারা অবশ্যই লাগবে। অনুরূপ তর্কের সময়ও যদি কেউ বলে " এই যদি না হয় তবে আমার স্ত্রী তালাক, অথচ বাস্তব তার প্রতিকূল হয়, তাহলে ঐ একই বিধান প্রযোজ্য। তবে তালাক নিয়ে এ ধরণের খেল খেলা স্বামীর জন্য উচিত নয়। ( কিদাঃ ২/২৪২, ফউঃ ২/ ৭৯১)
কেউ যদি স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে, তবে এই জোরপূর্বক অনিচ্ছাকৃত তালাক গণ্য নয়।
অনুরূপ নেশাগ্রস্ত মাতালের তালাক।( মবঃ ৩২/২৫২) চরম রেগে হিতাহিত জ্ঞানহীন ক্রুদ্ধ ব্যক্তির তালাক,(মবঃ ১৬/৩৪৭,২৬/১৩৩) ভুল করে তালাক, অতিশয় ভীত- বিহল ব্যক্তির তালাক গণ্য নয়। (ফিসুঃ ২/২২১)
মরণ – শয্যায় শায়িত স্বামী তার মীরাস থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য তালাক দিচ্ছে বলে জানা গেলে তাও ধর্তব্য নয়। সুতরাং সে তার ওয়ারেস হবে এবং স্বামী – মৃত্যুর ইদ্দত পালন করবে। ( ফিসুঃ ২/২৪৯)
স্বামী তালাক নিয়ে কোন ঠাট্টা -মজাক নেই। মজাক করেও স্ত্রীকে তালাক দিলে তা বাস্তব।(ইরঃ ১৮২৬ নং)
বিবাহ প্রস্তাবের পর কোন মনোমালিন্য হলে স্বামী তার বাগদত্তা স্ত্রীর উদ্দেশ্যে যদি তালাক বা হারাম বলে উল্লেখ করে, তবে তা ধর্তব্য নয়। অবশ্য বিবাহের পর তাকে কসমের কাফফারা লাগবে।( মবঃ ৯/৫৮, ফুইঃ ২/৭৮৭) তালাকের খবর স্ত্রী না পেলেও তালাক গণ্য হবে।( ফউঃ ২/৮০৪)
আল্লাহ,তার রসূল বা দ্বীনকে স্বামী গালি দিলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। ফিরে নিতে চাইলে তওবা করে নতুন মোহরে পুনঃ বিবাহ করতে হবে।( ফউঃ ২/৭৮৩)
চিথির মাধ্যমে তালাক দিলে তা গণ্য হবে। অনুরূপ বোবা যদি ইঙ্গিতে তালাক দেয় তবে তাও গণ্য।
অবশ্য লিখতে জানলে তার ইঙ্গিত গণ্য নয়।( ফিসুঃ ২/২২৯) আরো পড়ুন