এক বর পাগল নারীর শিক্ষণীয় গল্প | bangla life story

এক বর পাগল নারী কিভাবে তাঁর স্বামীর হৃদয় জয় করেছেন, বরপাগল নারী তাঁর বান্ধবীকে স্বামীর হৃদয়রাজ্য জয়ের গল্প বলেছেন।  পড়ুন বরপাগল নারীর জীবনের সফলতার গল্প। 

এক বর পাগল নারীর শিক্ষণীয় গল্প (দুই বান্ধবীর আলাপন)

বর পাগলশাকেরা ও শবনম দুই বান্ধবী। দু’জনই বিবাহিতা। ওদের বয়ের বয়স পায় আট বছর। প্রথমে বয়ে হয় শাকেরার । তার দু’মাস পর শবনমের।

‘বর পাগল’ বলে শাকেরার একটা বদনাম (!) আছে। অনেকে অবশ্য শাকেরার স্বামীকেও ‘বউপাগল’ বলে ক্ষেপাতে চেষ্টা করে। কিন্তু যে যা-ই বলুক না কেন, কারো কথায় কর্ণপাত না করে প্রেম-ভালোবাসা ও আদর-সোহাগ ঢেলে এই দম্পতি তাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে দিনের পর দিন সুদৃঢ় করেই চলছে। ন

একদিন কথায় কথায় শবনম তার বান্ধবী শাকেরাকে বলল, তোমাদের স্বামী – স্ত্রীর মধ্যে এত মিল-মুহাব্বত কী করে হলো? কেন তোমার স্বামী তোমাকে এত ভালোবাসে? কী কারনে একে অপরকে একদিনও না  দেখে থাকতে পার না? কেন লোক জন তোমাকে বর পাগল এবং তোমার স্বামীকে বউ পাগল বলে?

শবনমের প্রশ্ন শুনে শাকেরা একগাল হাসল। তারপর বলল, আমি আমার স্বামীর জন্য হৃদয়-সব কিছু উৎসর্গ করে দিয়েছি। তার খেদমত করাকে আমার জীবনের প্রধান ব্রত হিসাবে বেছে নিয়েছি। তার সন্তুষ্টি অর্জনকে আমার সর্বশ্রেষ্ঠ কর্তব্য বলে মনে করেছি। তাছাড়া স্বামী হিসেবে আমি তাকে এতবেশী ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করি যা ভাষায় প্রকাশ করাও আমার পক্ষে অসম্ভব। এসবের বিনিময়ে আমি আমার স্বামীর এমন একটি জিনিস জয় করে নিয়েছি যা জয় করা প্রতিটি নারীর পবিত্র দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আর তাহলো – স্বামীর হৃদয়রাজ্য।

এই হৃদয়রাজ্য জয় করার ফল এই দাঁড়িয়েছে যে, তিনি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসেন। তাকে দেখে মনে হয়, আমি ছাড়া তার জীবনের যেন কোনো মূল্যই নেই। আমি একদন্ড তার চোখের আড়ালে থাকলে তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। আমার কোনো ইচ্ছাই তার কাছে অপূর্ণ থাকে না। আমার ক্রটি-বিচ্যুতিগুলি ভালোবাসার কোমল পরশ দ্বারা তিনি শুধরিয়ে দেন। কোনো সময় আমি অন্যায় ও অসঙ্গত আচরণ করলেও তিনি আমাকে কোমল ভাষা ও প্রীতিময় সম্ভাষণে সতর্ক করে দেন।

এ অবস্থা অবশ্য আমারও। তুমি হয়তো দেখছ যে, আমি তোমার সাথে গল্পে মেতে আছি, কিন্তু সত্য বলতে কি, আমার মনটা কিন্তু এখনও তাঁর নিকটই পড়ে আছে। তোমারা আমাকে বর পাগল বলো আর যা-ই বলো, আমি কিন্তু তাকে ব্যতীত আমার অস্তিত্বকেও কল্পনা করতে পারি না। কেননা তার খেদমত ও ভালোবাসার মাঝেই আমি জান্নাতের সুখ খুঁজে পেয়েছি। তার অস্তিত্বের মাঝেই আমি আমার নিজেকে আবিস্কার করেছি। আমি আমার স্বামীকে সাথে রাগ দেখাই না। অভদ্র ও অশোভন কোনো আচরণ করি না। তিনি কষ্ট পাবেন এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকি। তিনি ঘরে আসলে আমি সুন্দর ও পরিপাটি হয়ে তার সামনে যাই। সেই সাথে প্রাণোচ্ছল হাসি দিয়ে তাকে স্বাগত জানাই এবং তার সকল চাওয়া পাওয়া আমি আমার সাধ্যমত পূরণ করার চেষ্টা করি।

শবনম ছিল দাম্পত্য জীবনে চরম অসুখী। বিয়ের পর থেকে অশান্তির অনলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছিল সে। অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তার দাম্পত্য জীবন।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছিল, তার কিছুই সে বুঝতে পারছিল না। সে শুধু এতটুকু বুঝতে যে, স্বামীর কারণেই তার এই দুর্দশা। কিন্তু আজ শাকেরার কথায় তার ভুল ভাঙ্গল। আজ সে সবকিছু ভালো করে বুঝতে পারল। সে বুঝতে পারল, স্বামীর হক আদায়ে ক্রটি হওয়ার কারণেই তার জীবনের এই করুণ অবস্থা। সে আরো বুঝতে পারল, জোর খাটিয়ে কিংবা প্রভাব দেখিয়ে স্বামীর ভালোবাসা আদায় করা যায় না। পারা যায় না তার হৃদয় রাজ্য জয় করা। তাই সে প্রতিজ্ঞা করল, আজ থেকে স্বামীর হকগুলো সে পুরোপুরি আদায় করবে। স্বামীকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিবে। মনপ্রাণ উজার করে তাকে ভালোবাসবে ও তার খেদমত করবে। তার সাথে মধুর ও বিনম্র আচরণ করবে এবং সর্বোপরি তাকে যে কোনো মূল্যে খুশি রাখতে চেষ্টা করবে।

শবনম যখন সত্যি সত্যি তার প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন ঘটাল, সত্যিকার অর্থেই সে যখন তার স্বামীকে ভালোবেসে তার খেদমত শুরু করে দিল, সেই সাথে একদম বন্ধ করে দিল যাবতীয় অশোভন ও অমার্জিত আচরণ তখন দেখা গেল, স্বামীও তাকে আপন করে নিল এবং পাগলের মতো ভালোবাসতে শুরু করল। তার সুবিধা-অসুবিধা, আরাম-আনন্দ ও ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি খুব খেয়াল রাখতে লাগল।  এমনকি স্ত্রীর জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে তৈরী হয়ে গেল।

প্রিয় মা ও বোনেরা! আপনাদের মধ্যে এখনো যারা শবনমের ন্যায় ভুল ধারণায় আছেন, যারা মনে করেন- স্বামীর হক আদায় না করে শুধু প্রভাব খাটিয়ে তার কাছ থেকে ভালোবাসা ও নিজের অধিকার আদায় করে নিবেন তারা কখনোই সফল হবেন আন। তাদের সফলতা ঐভাবেই আসতে পারে যেভাবে এসেছিল শবনমের জীবনে। তাই আপ্নারা এই পথেই অগ্রস্র হউন। তবেই শান্তিময় দাম্পত্য জীবন আপনাদের নসীব। তবেই আপনারা নিজ নিজ স্বামীকে খুশি করে জান্নাতের পথ সুগম করতে পারবেন। এর বিকল্প কোনো উপায় নেই। আল্লাহ তাআলা আপনাদের সবাইকে সঠিক পন্থায় স্বামীর হৃদয় রাজ্য জয় করে জান্নাতী সুখ দুনিয়াতেই ভোগ করার তাওফীক দান করুণ। আমীন!!   

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম। (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ২) 

এরপর পড়ুন : স্বামীর মন জয় করার এক মর্মস্পর্শী কাহিনী।

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment