সঞ্চয় নয়, দান করুন (আল্লাহর অলির ঘটনা)

সঞ্চয় নয়, দান করুন এটি এক আল্লাহর অলির জীবনের ছোট ঘটনা। দান করার ফজিলত ও মহত্ব বুঝাতে লেখক এক আল্লাহর ওলির ঘটনা গল্প আকারে তুলে ধরেছেন। তাহলে আসুন সঞ্চয় নয় দান করুন গল্পটি পড়া শুরু করি…

সঞ্চয় নয়, দান করুন (only not saving, please donate)

দানমেয়েদের একটি স্বাভাব হলো, তারা দান করতে চায় না। শুধু দু’পয়সা চার পয়সা করে সঞ্চয় করতে চায়। অথচ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের নানা জায়গায় দান করার কথা উল্লেখ করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন। উৎসাহিত করেছেন। এই নির্দেশ ও উৎসাহ যেমন পুরুষদের দিয়েছেন, তেমনি দিয়েছেন নারীদেরও। তাই পরিপূর্ণ অর্থে মুমিন হতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকেই আল্লাহর পথে দান করতে হবে। আপন চরিত্রে ঠাঁই দিতে হবে দানশীলতার গুণকে।

দান তো আমরা আল্লাহর জন্যই করব। এবং এর প্রতিদান নেব তার কাছ থেকেই। দুনিয়াতে নয়, আখেরাতে। তবে আল্লাহ পাক বান্দাদের প্রতি অতিশয় মেহেরবান। দানের বদলা তো আখেরাতে দিবেনই, দুনিয়াতেও আমাদেরকে এই বদলা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করেন না তিনি। দুনিয়ার এ বদলা কখনো হয় প্রত্যক্ষভাবে, আবার কখনো হয় পরোক্ষভাবে। অর্থাৎ কোনো কোনো সময় পরিস্কারভাবেই আমরা বুঝি যে, অমুক দানের বিনিময়ে পরওয়ারদেগার আমাদেরকে এই এই নেয়ামত দান করেছেন। যেমন, আপনি কোনো অভাবীকে দুটি রুটি দান করেছেন, আর একটু পরেই আল্লাহ পাক কোনো বাদার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো উপায়ে আপনার কাছে আরো কয়েকগুণ বেশি রুটি কিংবা অন্য কোনো মজাদার খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর পরোক্ষ বদলার উদাহরণ হলো, আপনি কাউকে কিছু দান করেছেন, আর আল্লাহ পাক আপনাকে এমনভাবে এর বদলা দিয়েছেন, যা আপনি বুঝতে পারেন নি। যেমন আপনার কোনো বিপদ দূর করলেন অথবা আপনার রুজি-রোজগারে বরকত দিলেন ইত্যাদি। সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা! এবার চলুন, ‘দানের প্রত্যক্ষ বদলা’ লাভের একটি ঘটনা শুনি। এবং আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনা আপনাদের দানের হাতকে আরো শক্তিশালী করবে। মজবুত করবে। দান করার ব্যাপারে আপনাদেরকে উৎসাহিত করবে-দারুণভাবে। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ

এক আল্লাহর অলীর ঘটনা।

একদা তাঁর স্ত্রী রুটি বানানোর উদ্দেশ্যে আটার খামিরা তৈরি করলেন। এমন সময় তাঁর মনে হলো, আরে! ঘরে তো আগুন নেই। আগুন জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই। তাই স্বামীকে বললেন–আপনি খামিরার দিকে খেয়াল রাখুন। আমি পাশের ঐ প্রতিবেশীর ঘর থেকে আগুন নিয়ে আসি। বুযুর্গ বললেন, ঠিক আছে–যাও।

স্ত্রী আগুন আনতে গেল। এ সময় ঘরের দরজায় এসে এক ফকীহ হাঁক ছাড়ল। বলল, মাগো! আমাকে কিছু খাবার দিন।

ঘরে তখন খামিরা করা সামান্য আটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই এটাকেই তিনি ফকীরের হাতে তুলে দিলেন। সেই সাথে বিনয়ের সাথে বললেন–ভাই! দেওয়ার মতো ঘরে আর কোনো খাবার নেই। থাকলে এই কষ্টটুকু তোমাকে দিতাম না। তুমি এই খামিরা দিয়ে রুটি বানিয়ে খেয়ে নিও। কেমন?

ফকীহ ‘জ্বী আচ্ছা’ বলে খামিরা নিয়ে চলে গেল।

কয়েক মিনিট পর স্ত্রী আগুন নিয়ে ফিরে এল। তারপর আটার খামিরা দেখতে না পেয়ে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, খামিরা কোথায়?

স্বামী বললেন, এক বন্ধু এসেছিল তাকে রুটি তৈরির জন্য দিয়ে দিয়েছি।

স্ত্রী কিছু সময় অপেক্ষা করলেন। কিন্তু কেউ আসছে না দেখে বললেন–মনে হয়, আটার খামিরা আপনি কাউকে দান করে দিয়েছেন।

বুযুর্গ বললেন–হ্যাঁ।

স্ত্রী বললেন–আরে আল্লাহর বান্দা! অন্তত একটি রুটি বানানো যায়, এই পরিমান আটা রেখে দিলেও তো দু’জনে ভাগ করে খেয়ে নিতে পারতাম।

বুযুর্গ বললেন–আমি খুবই ভালো বন্ধুকে দিয়েছি। চিন্তা করো না। স্ত্রী বললেন-বুঝলাম না।

-বুঝলে না? না বোঝার কি আছে এখানে? আরে আল্লাহর বান্দী! আমি এমন এক বন্ধুকে দিয়েছি যিনি কেবল নিতে জানেন না, দিতেও জানেন। শুধু দিতে জানেন বললে ভুল হবে। বরং বলতে হবে–তিনি আরো উত্তমরূপে দিতে জানেন।

-এবার তো ব্যাপারটিকে আরো জটিল করে ফেললেন।

-থাক থাক। এমন আর আমার কিছুই বলার দরকার নেই। একটু অপেক্ষা করো, তবেই সবকিছু স্পষ্টরূপে বুঝতে পারবে।

কিছুক্ষণ পরই দরজায় আওয়াজ শোনা গেল। বুযুর্গ উঠে দরজা খুলে দিলেন। দেখলেন–এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর এক হাতে গোশত বোঝাই একটি পেয়ালা, আরেক হাতে রুটি বোঝাই একটি পাত্র। লোকটি বলল–অমুকে আপনাকে এগুলো হাদিয়া দিয়েছেন। মেহেরবানী করে কবুল করুন।

বুযুর্গ রুটি ও গোশত নিয়ে হাসিমুখে ভিতরে এলেন। তারপর স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন–আমি তো আমার বন্ধুকে শুধু আটার খামিরা দিয়েছিলাম। আর আমার বন্ধু এতই ভালো ও দয়ালু যে, তিনি রুটি তৈরি করে তাঁর সাথে গোশতও রান্না করে পাঠিয়েছেন।

স্ত্রী বললেন–হ্যাঁ, এবার আমার বুঝে এসেছে আপনি বন্ধু বলতে কাকে বুঝিয়েছেন।

প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! মূলত আল্লাহর রাস্তায় দান করার বিষয়টি এমনই। তাই আমি আপনাদের বলব, আমাদের কাজ সঞ্চয় করা নয়, বরং আমাদের কাজ হলো–দান করা, দান করা, শুধুই দান করা। অতএব, আমরা নিজেরাও দান করব, সন্তানদেরকেও আল্লাহর নামে দান করতে শেখাব। সেই সাথে একথাটি অবশ্যই শেখাব যে, এই পয়সা অবশ্যই একদিন আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ফিরিয়ে দিবেন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে দান করতে অভ্যস্ত করার জন্য তাদের হাতে দু’ টাকা, দশ টাকা তুলে দিয়ে বলব, অমুক গরীবকে দিয়ে এসো।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি কথা বলতে হচ্ছে। কথাটি হলো- আজকাল অনেক মেয়েকেই সাধারণ দান তো দুরের কথা, অলঙ্কারের যাকাত দিতেও অবহেলা করতে দেখা যায়। অথচ তারা ভেবে দেখে না যে, যাকাত না দেওয়ার কারণে এই অলঙ্কারই একদা আগুন হয়ে তাকে দুগ্ধ করবে। তাই মা-বোনদের বলছি–আপনারা এ ব্যাপারে সতর্ক হোন। প্রতি বছর হিসেব করে অলঙ্কারের যাকাত দিন। নিজস্ব টাকা পয়সা ইত্যাদি  থাকলে সেগুলোর যাকাত দিতেও ভুলে যাবেন না। এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানার থাকলে ০১৭১২-৭৯২১৯৩ নম্বরে ফোন করে জেনে নিন। হে মাওলায়ে কারীম! তুমি আমাদেরকে এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার রাওফীক দাও, যে অবস্থায় কারো কোনো হক আদায় করা আমাদের বাকী থাকবে না। না আল্লাহর হক, না বান্দার হক। আমীন। [সূত্রঃ বেহনূঁ ছে খেতাব]   

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম (আদর্শ স্বামী স্ত্রী ১) 

এরপর পড়ুনরাসূলের মুচকি হাসি

For more update please follow our Facebook, Twitter, Instagram , Linkedin , Pinterest , Tumblr And Youtube channel.

Leave a Comment